কবি সবর্না চট্টোপাধ্যায়ের পাঁচটি কবিতা :
ক্ষতিপূরণ
এ শুধু প্রেমের কবিতা নয়
তোমার ঠোঁটের কালসিটে দাগ
আমি যাকে তিল ভেবেছিলাম!
সূর্যাস্তে লাল সবই তো সুন্দর...
সেই কবে চোখ তুলে রেখেছিলে চোখে
তিস্তার তিরতিরে জল…
ব্যথাদের সঙ্গম ছিল
বিকেল আলোয় যেন ভুলে গেছি
‘চারদিকে তখন আকাল’....
তারপর কোন অভিশাপে
পাহাড় সাগর নদী
একসাথে ভাত রাঁধা বাকি
বাকি ফুল ছাপ শাড়ি
ছুটে গেছি ত্রস্ত কাঙাল
‘একটা যে কোন কাজ’ - তুমি চলে গেলে পায়ের
ছাপ ফেলে। দুধে আলতায় বাড়ন্ত সংসার।
এ শুধু প্রেমের কবিতা নয়।
পাঁজরের ভেতর ঢকঢক করে দেশি মদ
পায়ে ধরেছি সাধু সন্ন্যাসী। তিনটে আংটি তিথি পাঁজি…
অথচ ভুল। যে দেশ কথা রাখেনি কোনদিন
আমার মৃত্যু হোক শুধু এক ক্ষতিপূরণ!
আড়াল
কত রোদ জমে আছে আয়নার পিছনে
লুকানো লাল টিপ…
বাজার থেকে ফিরে রেখেছিলাম সযত্নে!
এখন দপদপ করছে ওয়াইফাই
বসে আছি ভজা শালিকের মতো
হোয়াটস অ্যাপে শুধু এটাওটা লিস্ট
ক্ষীর জমা দই
ফ্রিজে রাখা দুদিনের বাসি চিংড়ি…
‘আসবে আসবে’ করে ফেলা হয়নি আর!
ভেজা জুতো দুটো ছাপ ফেলে গেছে সাদা মেঝে
‘তুতুন তাতাই’ স্কুল থেকে ফিরেছে হবে!
আমি মুখ দেখি সারা দুপুর জাগার পর।
অক্ষরগুলো সংলাপ চাইছে এবার…
আমাদের বন্ধুত্ব ফিরছে ক্রমশ সবার আড়ালে!
বই
এক একটা মেঘলা দিন যেন পুরোনো বইয়ের গন্ধ। উপুর হয়ে ঘুমায় খাতাপেন। নাল পড়া বালিশ!
ঝিমুনি আসে...
তোমায় লক্ষ ভুলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া ছাড়া
আমি অসহায়!
সে বই বন্ধ করি জোর করে।
বাজার হেঁকে যায়। আখের রসে গড়গড়ে রোদ।
রান্নাঘরে গন্ধ আম ডাল…
মধ্যবয়সী স্তন ঢেকে রাখি।
হামা দেয় ঘুমন্ত অক্ষর। কালো টিপ লুকিয়ে তাকায় আয়নার কোণ থেকে...
কি যেন নাম দিয়েছিলে ‘বিতর্ক’!
রবীন্দ্রনাথ নাকি হুমায়ুন আহমেদ?
মিসির আলি না হিমু!
আমি থেমে গেছি বারবার ‘শেষের কবিতা’।
ঠোঁট উল্টে বলেছ ‘ মিলছে না’।
সত্যি কি মিলল তবে?
‘অমিত চেয়েছিল খাঁটি বাঙালিয়ানা’
বুঝতে পারেনি তবু, একঘর পুরোনো বইয়ের গন্ধতে
ঘুম আসে মধ্যবিত্ত মেয়ের ।
কি জানি কতদিন পর
কি জানি কতদিন
একা আমার মতো...
ছায়া নেই। রাশি রাশি গাছ…
চেনা চেনা লাগে ।
একে একে পার হয়ে যায় স্টেশনের নাম।
সতর্ক বসি।
ওদিকে হকার চেঁচায়, “বাদাম বাদাম”
কত প্রসাধন...
কাঁচা আমলকি…লোভ হয়!
ছোটবেলায় বড়দিদি শুকোতে দিত রোদে...
আরও একটা স্টেশন পেরিয়ে যায়।
নালা আর বাড়ি মিশে আছে
কাঁপছে ঝুপরি দোকান।
কোথাও রেলগেটে ব্যস্ত মানুষ
হয়ত দেরী হয়ে গেছে। পৌঁছতে শেষবার…
সতর্ক বসি ।
পথ এগিয়ে আসে…
যেতে হবে। ঠিকানা জেনে নিতে হবে
তোমায় ছাড়া এত বছর পর...
ট্রেনের বুড়ো হকার...
আমি পিছু নিই যেভাবে সে পেরিয়ে যাচ্ছে
এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম
ঝড়
হেঁটে যাচ্ছে বিমর্ষ এক সকাল
ভাঙা ছাতার গা বেয়ে নামছে কত মৃত্যু
ঝড়ের প'রে বাসাহীন ব্যাঙের ডাক
কোনদিন ভোরকে এভাবে, রাত মনে হয়নি আগে!
সামনের ঝুপড়ি উড়ে গেছে। উদ্বাস্তু সন্ধ্যের হাওয়া
গা ছমছমে ভূতের মতো এখনও ঝুলছে ছেঁড়া পর্দায়….
চারটে গরু সারারাত কেঁদেছে
আর খুরের নীচে জমেছে পাখির পালক!
আমি দেখেছি জানলা দিয়ে….
যতবার ফুঁসেছে বাতাস ভেবেছি ‘ ঠিক আছো তো’?
হয়ত এটা...হয়ত বা ওটা...‘ভিজে গেছ বোধহয়!’
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে আজও কেমন ঝড় ওঠে
আড়ালে আড়ালে!
________________
No comments:
Post a Comment