কবি শ্যামশ্রী রায় কর্মকারের পাঁচটি কবিতা :
যদি ভালোবাসতে দাও
তবে আমি থমকে দাঁড়াব
দুদণ্ড জিরিয়ে নেব তোমার ছায়ায়
নদীর পাড়ে হাত ধরাধরি করে বসে থাকব কিছুক্ষণ
চ্যাটালো নুড়ি খুঁজে ছুঁড়ে দেব জলের ওপর দিয়ে দূরে, আরও দূরে
ওরা পেরিয়ে যাবে সন্ধ্যার মাঝি ও নোঙর
লাল নীল রূপকথা মাছ
পাহাড়ের অলীক খাঁজে দেবতার ভূম
যদি ভালোবাসতে দাও
বুকের পাথরগুলো ঝিলমিল আলো দেবে নক্ষত্রের মতো
না লেখা চিঠির কথাগুলো
প্রতিধ্বনি তুলবে পাহাড়ে, অরণ্যে, গ্যালাক্সির হু হু শূন্যতায়
এই পাংশু হেমন্তেও
তীব্র পলাশের মতো দপদপ করে উঠবে আমার ঠোঁট
যে চেয়ারে তুমি বসে থাকো,
সোনালি পানীয় হাতে কিছুটা নড়বড়ে
সেখানে গজিয়ে উঠবে আমাদের নৈঃশব্দের ফুল
যদি ভালোবাসতে দাও
তবে আমি আবার জন্মাব
তুমি গ্রীষ্ম হয়ে যাবে বলেছিলে
সেই থেকে গ্রীষ্ম এলেই
রূপসী রোদ্দুর খুলে লিখে ফেলি নিজস্ব ঘোর
অকারণ শুয়ে থাকি নদীর কোমরবন্ধে
নিষিদ্ধ দড়ির সাঁকোটিতে
সাঁকো দোলে, দোল খাই বিপজ্জনক
ছায়াপথ থেকে আসা দু একটা চোরকাঁটা
পোশাকে জড়িয়ে থাকে উদাসীন মতো
তোমাকে পেয়েছি ভাবতেই
আচমকা হয়ে যাও ডিসেম্বরের শীতে নিঃসঙ্গ খামার
আমিও নির্জন হয়ে ঠায় বসে থাকি
বিরাট গাছের নিচে পড়ে থাকে কতিপয় বাক্সবাদাম
একেকটি বাক্স খুলতেই ঝিকমিক করে ওঠে
আমাদের অক্ষরশ্যামল মাঠ, ঘরবাড়ি,মায়াবী কার্ণিশ
কোনো কোনো বাক্স থেকে
খামারে ছড়িয়ে যায় কবেকার ঢেউভাঙা হাসির গমক
কোনোটায় ভরা থাকে
আমাদের জীবনের কার্পেডিয়াম থিম
তোমার বাড়িয়ে দেওয়া সমুদ্রের মতো দুটি ঠোঁট
চুম্বনের মহাকাব্য, স্পর্শের বিদ্যুৎ চমক
ভাঙা গিটারের খোল,নীল শব্দাবলী
যতদূর চলে গেলে
সম্পর্কের বুক থেকে পুরনো খাতার গন্ধ ওঠে
পাহাড়গঞ্জে ঠিক ততদূর হাঁটতে হাঁটতে
পেয়ে যাই চায়ের দোকান
বেঞ্চের উপর শুয়ে পড়ে থাকে বিস্তীর্ণ যুবকবেলা
কেটলি থেকে ধোঁয়া ওঠে নীরবতার
মেঘের কয়্যার থেকে সংগীত নিভে যাওয়ার আগেআগে
হাজার বছরের পুরনো গিটার বেজে ওঠে
খাদের কিনার থেকে কুড়িয়ে নিই তার আধভাঙা খোল
ভিতরে আকাঙ্ক্ষার দাগগুলি চিকমিক করে
এক কাপ চায়ের জন্য হাত বাড়াতেই
দোকানি মেয়েটি খুলে দেয় তার অজন্তা কবরী
উদ্ভিন্ন শরীর থেকে উড়ে যায় বেগুনি পালক
ঠিক তখনি কেন যে আলো কমে আসে রাস্তায়
নবীন তামস ভেঙে
একমুঠো তুলে রাখি নীল হাতব্যাগে
শূন্য খোলের সাথে জড়ামড়ি হয়ে যাওয়া নীল অন্ধকার
তৃষ্ণার শব্দ হয়
ব্যাগের গোপন ঘরে ডালপালা ছাড়ে
তারপর যেমনটি হয় চিরকাল
এক সময় ফাঁক বুঝে
বুকের বাঁ পাশ বেয়ে হু হু করে ছেয়ে যায় ছত্রাকের মতো
শব্দটি পানের খিলি
শব্দটি পানের খিলি,আভা রসে রাঙিয়েছে ঠোঁট
নিরুক্তির পাশে ওই বাজে তার আহ্লাদী ঠমক
মায়াবী, লাজুক
তার নির্জন নদীর মতো চোখ
আমি তার মনোলীনা নাম ধরে ডাকি
ইদানীং যেরকম হয়
মেয়েটির দারুণ সুদিন
এমনটি ভেবে ভেবে দুপুরবেলায়
ঘুমের সামান্য কাছে সে-ও বসেছিল ইদানীং
ঘোরানো সিঁড়ির মতো স্বপ্নের শেষতম ধাপে
লিখে রেখেছিল তার প্রেমের সততা
তারই যুবক
ক্রমশ দূরের দিকে চলে যেতে যেতে
পথভ্রষ্ট জাহাজের মতো
নিজেকে ভিড়িয়েছিল অন্যের বন্দরে
তাদের মুহুর্মুহু বিচ্ছেদ থেকে কক্ষপথ সরিয়ে নিয়েছি
মেয়েটিও অষ্টম প্রহরে
গাঙিনীর জলে এসে ধুয়েমুছে ফেলবে বিষাদ
পাহাড়তলির হাটে বেচে দিয়ে যাবে এতদিনকার দিকশূন্যতা
__________________
ভালো লাগলো !
ReplyDelete