July 28, 2019

গোপাল চন্দ্র সাহা




   ডাইমেনশন   

যেকোন ডাইমেনশন কেটে নেওয়া যেতে পারে
যেকোন আকার থেকে
এই যে ধরো,
যেভাবে পুষে রেখেছি একখানি ঘর, চতুষ্কোণী
অন্তরীক্ষ অথবা অন্তরে
ভিতরে রয়েছে বৃত্তীয় পরিধির সুষম অঙ্গীকার
আমি বলছি না সেটা কোন চাঁদ, উত্তীর্ণ মেয়াদের
যদি তুলে নিতে হয় শৌভিক আকার থেকে
কোন জৈবিক ডাইমেনশন -- সুখ দুঃখ অথবা বিরহের
শুধু নিজের ভিতর কাতরহীন ব্যবধানে
ধরে থাকো দগ্ধলপ্ত ছুরি, নির্লিপ্ত ব্যাকরণের
নিরবধি আমরা দাঁড়িয়ে আছি পৌনঃপুনিক, বৃত্তীয় নিয়মে ।।



নগর পালিকা অথবা আমি  

শাড়ি পেটিকোট খুলে দিলে
তোমার শরীরে
আর কিছু নেই
যদি থাকে কিছু
অবশিষ্ট  --
নাটকীয় নিষ্পাদন
কালো-আলো ঠিকরে এসে ধাঁধিয়ে ফেলে চোখ
আমি অন্ধ হয়ে যাই
হাতড়ে হাতড়ে ছুঁয়ে ফেলি অন্ধকার
::
তুমি যখন বেরিয়ে এসে দগ্ধ আলো পাড় --আঁধারে আলোর আলোকার :
                                                    নগর-নখর বিষে
                                             হেসে মরে কাপালিক!
দাঁড়িয়ে থাকে নিশ্চল আঁচলে তোমার দগ্ধ আড় ।।



    কবে ভেসে যাব স্রোত হয়ে   

সবার ভিতর রয়েছে দ্বৈতপথ -- আসা-যাওয়া আগুনের
হয়ত একটি সংগম আরেকটি সংগ্রামের
বুক থেকে নেমে এসে অপেক্ষা উরুদ্বয়ে
#
ঋষি ঋষি খেলা শেষে উরুদ্বয় ভিজে গেলে
মহর্ষির গাত্রজলই নদী হয় যেখানে
সেখানে জন্মায় পদ্মনাভি; তাঁরই স্খলিত জ্যোতির্বীজে
                          --  তখন নিধুবনে মৃগযোনী কামিনীর
                              চঞ্চলমতী আবেদন
দুর্বল বীজ থেকে আরো কিছু কীটনাভি -- লুপ্ত তাদের প্রথাগত ঋতি
                              -- গায়ে গায়ে আগুনের বিষ মেখে
                                 হেঁটে চলা মানবদল
নির্বাসনে রেখে প্রেম দিনমান, করালে কাল
ডুবিয়েছে যে বসন ভূষন যাবতীয় মাটি :
এসবই আজকাল --  ছায়াছবি গতকালের
মহর্ষি ! তুমি তো দাহপুরুষ প্রতি নির্বন্ধ শোকের মূল্যে
#
যখন খোঁজ-প্রতিবেদনে থাকে না অন্তরীক্ষ --
পালকের নীচে অসুখ পুষতে পুষতে অর্বাচীন হয়ে ওঠে ক্ষতরা
নিশ্বাসের ঘষা লেগে ক্ষয়ে যাওয়া ছাদে
বাজপাখি ফেলে যায় দুর্বল পালক
তখনও অসীমকে বাঁধার লুপ্তইচ্ছেরা এসে দাঁড়ায়
ছাদের অনিশ্চিত এক কিনারায়
#
অথচ বিস্ময় ভেঙেভেঙে জলপাথর এখানে প্রাণময়
তারা লিখে রেখেছে বানের কথা অকুতো-ভাবনায়
সত্যি কি তারা বেঁচে আছে জয়ধ্বনি সংকেতে
যারা প্রোথিত রয়েছে বন্ধ্যা মন্দিরে  !
                                     পাথরে গ্রথিত দেব-ভাষ্যে
                                       ডুবে আছে নিশ্চল স্রোত
#
এই যে কবিতা, আগুন মানুষ ঋষি অথবা কোন অফলিত বিকেলের--
                    এরা সবই জাতিস্মর, মৃতবাহী ইতিহাসের
কেজানে কোন্ ধারনায় ধরা আছে রং বিধ্বস্ত যাপনের
সেটা মুখ দেখে বোঝা দায়  :
আমাদের দাহিত-চক্ষু ঋষভ লব্ধ অন্ধকারের
অভিশাপ নেমে আসে অভিসন্ধির পথ ধরে
#
এই প্রেম বিরহ যুদ্ধ যাপন -- ব্যাথা হতে হতে কখন যেন হয়ে ওঠে
একফালি মাঠ : জলহীন মুমূর্ষু ভূমিকা

বাতাসও রেখে যায় সংকল্পে বন্য আবেগ
কোন নক্ষত্রযোগী যখন নেমে আসে না হৃদিজোড়ে
মৃতকোষে ঋদ্ধ হয়ে ওঠে নিশ্বাসের পোড়া ছাই
#
তাইতো প্রতিটি কবিতার অনিবন্ধ-জীবনী
লিখে রাখছে আরেক কবিতা
আমাদের দেহ-শবের সৌষ্ঠবে :
"যখন ভেসে উঠেছিল পঞ্চমীর চাঁদ
ভেবেছিলাম মরে গেলেই পূর্ণ হবে সাধ
শুয়েছিলাম পাশাপাশি; পাশে ছিল আলোনদী
আশা ছিল, প্রীতি ছিল, ভাষাও ছিল জ্যোৎস্নায়
তবু যেন ভেঙ্গে যাচ্ছিল ঘুম,                 বারেবার !
সে ছিল এক রাত, করুনাহীন, রক্তলীন সত্বার
অপেক্ষায় আদিগন্ত - কবে ভেসে যাব স্রোত হয়ে"
।।



 এপিটাফ /২  

ভাবি, মাঝে মাঝে আমি মরে যাই কেন
আবার বৃষ্টি নামলেই হয়ে উঠি গাছ !
তোমার এলোকেশী চুলেইতো
আকাশ-আলো ঝাপসা হয়ে ফেরে
বুঝে যাই, বৃষ্টি নামার সময় হল তবে --
তোমার নিস্তব্ধ পায়ে পায়ে, একটু একটু করে
তবে,
এখন শরীর ভেজে না আর আগের মত করে
রামধনু রেখে গ্যাছে ছলনাদের বৃষ্টিজলে ফেলে
বিদ্যুৎ দহনেও ছলনা ! শুধু শরীরটুকুই যা পোড়ে
এখন শরীর ভেজে না আর আগের মত করে
আকাশ-আলো ঝাপসা হয়ে এলে
এই তো বৃষ্টি আসছে নেমে ঝিমধরা পায়ে --
নামতে নামতে আমি হয়ে উঠি গাছ
আকাশ তখনও হলদে পাতার রূপকথা বলে চলে  ।।



তবু উষ্ণায়নে থাকে শ্রাবনীর আগমনী    

যেখানে ছেড়ে এসেছিলাম প্রাক্তনী পদ
যে উষ্ণতায় পরাগ শুকিয়ে জাফরানী আহ্লাদ
সেখানে বসেই তুমি নাভিমূলে এঁকেছিলে দেব-বিদ্ধ অঙ্কুশ
কালো চাঁদ আর তারার রক্তিমে নিষিদ্ধ ঘর  --
আমি কিন্তু বলিনি, সেটা মাটি নাকি মনছায়ার প্রক্ষালন
হয়ত শরীর থেকে ঝরে ছিল কাজরি ফুলের নিবন্ধ
#
যে প্রদীপ আলো দেয়, আলো শেষে
শুয়ে থাকে এক পেট অন্ধকার নিয়ে
তোমার আমার মত প্রাচীন সেতুর নীচে উবু হয়ে
লিখে রাখে জীবনের রেখাবলি
গন্ধ ভুলে শ্বেত পুষ্প শুয়ে আছে আক্ষিপ্ত রাত্তিরে -
এরকমই এক অন্ধকারে এসেছিলাম পাশে
সবিশেষ আলো হয়ে
বলেছিলাম, এক দূর তীরে রাখা আছে আমাদের উষ্ণতা
নাব্যতা গৃহসুখী
দূরত্বের হিসেব গুনেগুনে তুলে নিও সংক্ষিপ্ত নিরিবিলি
#
এখন পৃথিবীর কক্ষপথে এসে গ্যাছে আরেক সন্ধ্যা
তিন যুগ চরিত্ররা খেলতে খেলতে ফেলে গ্যাছে বিশংবাদ
এই যারা দূরত্বের অভ্যাসে ছেড়ে গ্যাছে আর্তনাদ
পড়ে আছে সিঁড়িঘাটের ভগ্নজল ছুঁয়ে
স্নেহ আবেদনে --
                           আগুনের শেষ ধোঁয়াটুকুর মত ধরে
                                          আছে মৃত মননের সন্তাপ
এখানেই থমকে রয়েছে সাগর জাহাজ আর নাবিকের তট-স্তুতি, পাশাপাশি
                                            লৌহ কম্পাসের লাশ ঘরে
তরঙ্গজলে রাজহাঁস হেঁটে গেলেও চোখে ভাসে বিদিশা-রংয়ের কন্ট্রাস্ট
#
আজও দাঁড়িয়ে যখন কক্ষপথে
জীর্ণ ঘড়ি থেকে একটা অবকাশ তুলে নিতে
যখন ভাবছি কিছু জন্মান্তর পর আবার দেখা হলে বলে দেব --
এই কক্ষপথে পৃথিবী নেই
কোন জন্মান্তর নেই এখানে
আমরাই চিরন্তন আমাদের আলাপ সংলাপে
                                  আত্মপ্রসাদে মুড়ে রেখেছি ঋজু
                                   সুকুমার একটুখানি মহাজ্যোতি
তখন প্রাণের প্রতনু শিহরনে রোজি স্টারলিং পাখির উড়ন্ত সারি
ঠোঁটের প্রত্যয় ধরে আছে শ্রাবণী সিক্ত টুকরো টুকরো জিওন-কাঠি    ।।


No comments:

Post a Comment