May 26, 2019

সুপ্রীতি বর্মন






কবি সুপ্রীতি বর্মনের পাঁচটি কবিতা :


উপঢৌকন

বটের ঝুড়ি নৈঃশব্দ দুঃখ মনের কোণে চাপা ক্ষোভ,
ধৈর্যের সমস্ত বাঁধ ভেঙে অপদার্থের জরাতুর শোক।
আবদ্ধ স্বর্নালী সোপানের সম্পর্ক আড়িভাব, আজ তোমার জন্মদিন।
অগোছালো বইয়ের ভাঁজে চেনা আরশির স্বর্গসুখ আমার প্রেমিকা।
গটমট করে অন্তর্হিত সুসময় বন্ধ ঘড়ির কাঁটা অহেতুক হিসেব কষা।
অহেতুক চিল্লিয়ে অতল নিমজ্জিত ইচ্ছানদীর ঐকান্তিক আবদার।
সামর্থ্যের ঘেরাটোপে থরথর ভূকম্পন আমার চাই নতুন ঘড়ি।
ধ্রুবসত্য প্রেম আমার আলুথালু প্রেমিকার কেশ,
তবুও জিহ্বার তলায় রসস্রোত নাব্যতা হারিয়ে সরানি।
পলিমাটির জড়তায় জারিত শুদ্ধ প্রেম,
তোমার মনে ভাসে আমার দেওয়া মেঘহীন চুমু।
হামলে চলা হোঁচটপ্রবন পরিস্থিতি প্রেমিকের কোমরের জোর।
তলানিতে ঠেকে মৃতপ্রায় অস্তিত্ব তবুও ঘুণধরা দেওয়ালে সময়ের তাগাদা।
চাতাল সম বুকের তক্তায় নামলো উষ্ণ প্রসবন,
দূর আলাপনে ঐকান্তিক আবদার তোমার কন্ঠধারায়।
সুযোগ বুঝে পাল তোলা ওৎ পেতে সংগ্রহ শব্দঘরের চৌকাঠে।
উচ্ছ্বাসের স্রোত তোমার দেওয়া সময়ের সার সংক্ষেপ,
আমার উপঢৌকন নতুন ঘড়ি।



কংক্রিট

প্রতিষ্ঠিত কংক্রিটে উচ্ছন্নে চন্ডালিকা জোয়ার
অহংসৌম্যকান্তি দুরন্ত অশ্বদৌড় অট্টালিকা
বয়োবৃদ্ধ বটের বলিরেখা
অভিজ্ঞতার দীর্ঘমেয়াদী মলাট।।
মুমূর্ষু যৌবন অজন্মা সুযোগের উৎকন্ঠায়
হাত ফসকে মৃতপ্রায় চোরাবালি।।

ধূলোময় কানাকড়ি কিঞ্চিৎ সম্বল,
তবুও অগ্রাহ্য উত্থানে আগোল খুলে দেদার প্রেমে
বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণে ঢলাঢলি।।

ভিক্ষুক জরা আঁচল অন্ধ বৈরাগ্যে ঠনঠন থালা অযাচিত প্রেম
স্মৃতিগন্ধে ভাতের মাড়, ফুটন্ত কোকনদে প্রাজ্ঞ ফাটা চাল
আঁকড়ানো তবুও পড়িমরি উন্নতির আকর্ষ কলমিলতা
পেঁয়াজ কটূক্তির ঝাঁঝে গুচ্ছমূলে হাতড়ানো কৈশোর
অপ্রচলিত তবে কি যুবতি তুমি অতীতহীনা।।

নিরুদ্দেশ এখন ফাটা চাতাল তারুণ্যের নৈরাশ্যের হাহাকার
আধবোজা স্বয়ংক্রিয় প্রতিভা উঠা উঠা
এখন ভ্রূণ অঙ্কুরোদ্গম।।
বটের বাকলে বিধ্বংসী সৃষ্টিকথন রহস্যে বিদীর্ণ
প্রসবপ্রসূত উত্তরাধিকার দাপট শব্দসাঁকো
বন্ধ্যাত্ব এখন প্রাককথন।।



অনামী লেখক

অশ্রুসম পাষাণপ্রস্তর জমাট শোক, ক্ষুধার্ত স্বপ্নের দিশা।
মুখে চোখে নেই কোন ক্লান্তি, গভীর রাতে ছটফট ঘুম ভাঙে।
রমরমা অট্টালিকার মাঝে ব্যর্থতার অভিমান দুরস্ত ঢেউ,
চাদরে আপাদমস্তক ঢেকে লজ্জাবতী মৌন বিদ্বান,
অল্পবিদ্যা ভয়ংকরীর দলে শোষণে দিনরাত বেকারের ধাক্কার জড়তা।
পেশাদারিত্বের রোষানলে প্রকৃত জ্ঞান শুধু গোগ্রাসে গলাধঃকরন।
প্রকৃত চেতনাশূন্যতায় মাথা খুটে অন্ধত্ব মানবিকতার অপমৃত্যু।
উদাসীন শরীরে পোড়া অবশিষ্ট কর্মময় যৌবনের দাগ।
কপট শিক্ষিত লাভের গুড়ে মুখ গুঁজে বিদ্যাকে ঠেলে একপাশে।
স্বভাবদোষে বই তোমাকে ছাড়তে না পেরে, লিখতে থেকে হয়েছি আমি অনামী লেখক।
উর্দ্ধগামী দৌরাত্ম্যে শিক্ষা তোমার প্রকৃত অর্থ গেছিলাম ভুলে।
আজ নব দিগন্তের উন্মোচনে, সাহিত্য তোমাতে জীবন পেলাম খুঁজে।



হিজড়ে সুন্দরী

হিজড়ে সুন্দরী অনাগত অতিথি, আজ তোমার দ্বারে,
নৃত্য গীতে গা ভাসাভাসি হিন্দোল, মাথাচাড়া আবদার পকেট কেটে গড়ের মাঠ।
হৈ চৈ শোরগোল অট্টহাসি দীর্ঘশ্বাস অন্তরে লুকায়, কেটেকুটে ছিনিয়ে ঠিকুজী কুষ্ঠী পিতৃপরিচয়।
 অবুঝ কচি আগামী প্রজন্ম কাঁখে আলোকময়ী নাচন।বাঁধনছাড়া উন্মাদ আবদার প্রত্যাশা পারদ ছোঁয়া আকাশ, হুড়মুড়িয়ে গঙ্গাপ্রাপ্তি নৈব নৈব চ।
কোমর বেঁধে সমরে অগ্রগামী বৃহন্নলা, লাস্যময়ী অবাক করতালি শাব্দিক ছন্দগীতে।
 তুমি লজ্জা ঘেন্নার পিচ, রস পানে ভিজিয়ে অধরা ওষ্ঠ, চু কিত কিত আলোর নাচন।
খোলা হাওয়া গৃহবাসীর অবাধ উন্মুক্ত দ্বার,
ভ্রমিল কালো ভ্রমর চুষে চেটেপুটে ক্লেশ মধু,
ঝপাৎ করে চিল শকুনের শ্যেণদৃষ্টি,
খপাৎ শিকার নীরব দর্শক পিতা নির্বিকার।



নৈশিল মাদকতা

নিশীথকালে অবসাদের শ্যাওলা ভরা জলাজঙ্গম।
গভীর বিনুনী এলিয়ে দাড়িয়ে শাপলা সরসী।
অগভীর সমুদ্রের প্রতীক্ষায়, ভাসবে বলে খাদের গহ্বরে।
অঙ্গুলীচারনায় হিসেবী বিপনী গুনে গুনে শোধ তোলা।
কতটা গেল কতটা এল, হে কাপালিক, একবার থামো না।
সকল অনিষ্টের কালসর্প সযত্নে সিন্দুকে জমা করে,
উপরিপাওনা যাঁতাকলের পেষণে অমৃত।
শয্যায় আপাদমাথা চুলে চুলে কবেকার নিশার নৈশিল মাদকতা।
শ্যাম্পেনে জলসায় জলঘোলা আমি গৃহস্ত্রী।
নিরাকার ঔদাসীন্য তোমার শহুরে হাবভাব।
এলোচুলের লটে কতকাল পড়েনি যত্নের হাত।
উসকোখুসকো উদ্ভাবনী প্রেম ঊর্ণাজাল বোনে,
খোলাচুলে তোমাকে লাগে বেশ ভালো।

________________

No comments:

Post a Comment