July 28, 2019

সম্পাদকীয়


ভাবতে অবাক লাগে যে, এই ব্যস্ততার মধ্যে আজও অনেকে বাংলা কবিতা পড়েন! এটা অবশ্যই অত্যন্ত আশার কথা। এই আশাটা আছে বলেই নিরবচ্ছিন্নভাবে আজ 'দহর' তার একাদশতম সংখ্যাটির জন্ম দিতে পারল। নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যাঁরা শিকড়হীন ভাবে বাঁচতে চান, তাঁদের জন্য আর কোনো অক্ষর বা সময় অপচয় করা অর্থহীন। কিন্তু যাঁরা নিজের শিকড়কে সমূলে আঁকড়ে ধরে বাঁচার স্বপ্নে মশগুল তাঁদের প্রতি 'দহর' জন্মাবধি আন্তরিক। এই সংখ্যায় যে ৮ জন তরুণ তুর্কি তাঁদের কবিতার ডালি নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপিত হয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজস্ব মাতৃভাষার ঋণ স্বীকারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁদের স্বতন্ত্র অক্ষর প্রয়াস কিন্তু কোথায় যেন মাটির গন্ধে ভরপুর। এই মাটি আমাদের দেশের মাটি, আমাদের বাংলার মাটি। তাই যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বাংলা বিভাগকে চিহ্নিত করে বাংলা বহির্ভূত  শব্দবন্ধে, তখন সেই প্রতিষ্ঠানের শব্দভাণ্ডারের দৈনতাকে আজকের সমৃদ্ধশালী বাংলা ভাষা ক্ষমাসুন্দর চাহনিতে অবজ্ঞা কিংবা পুরোপুরি উপেক্ষা করতেই পারে। আজকের কবি মুক্তকণ্ঠে বলতেই পারেন, সবকিছু মুছে যায় শুধু এক গন্ধ প্রাচীন তুমিও চেনো না তাকে বাড়ি কিংবা পীঠস্থান আত্মবিস্মৃত ছুঁয়ে থাকো অদৃশ্য মেঘমল্লার। অক্ষরিক অর্থেই এই বক্তব্য অবশ্যই একটি সত্যকথন। আমাদের সকলের অনুভূতিটাই তো কবির কলমে বাঙ্ময় হয়, কলমের গর্বিত অক্ষর আমাদের সামনে আলোর প্রতিসরাঙ্কে তুলে ধরে- আমার ভেতর ও লালন তবেই না আমার জন্মের কাছে বসত। কিন্তু তাহলেও সতর্কতার প্রয়োজন। তাই যে কোনো ডাইমেনশনে আমাদের সচল রাখো আমাদের এই প্রতিবাদ। এখানেই জীবন, এখানেই কবিতা। এখানেই লুকিয়ে থাকে আমাদের সমস্ত ভরসা। সেই ভরসাতেই আমরা এগিয়ে চলি। কবিতার পঙক্তিরা আমাদের সেই আশ্রয়স্থলকে পরম ভালোবাসায় আগলে রাখে- আলোকবিন্দু একা একটা সূর্যের চোখে রাখে চোখ। কবি যখন আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে বলে ওঠেন,  অসীমকে বাঁধার লুপ্ত ইচ্ছেরা এসে দাঁড়ায় ছাদের অনিশ্চিত এক কিনারায়, প্রত্যেক পাঠকও তখন সেই কিনারায় কবির সঙ্গেই অঙ্গাঙ্গীভাবে এসে দাঁড়িয়ে পড়েন। মাতৃভাষার কাছে আমরা সবাই ঋণী, সমানভাবেই ঋণী। সেই ঋণ আমাদের অন্তর্গত রক্তকণিকায়,  সেই ঋণ আমাদের সত্তায়, অস্তিত্বে, ভালোবাসায়...

আজ দহরের একাদশতম সংখ্যায় আমরা আমাদের আটজন কবির পাঁচটি করে গুচ্ছ কবিতা আপনাদের সামনে উন্মুক্ত করলাম। আপনাদের ভালো লাগলে তবেই আমাদের সকলের পরিশ্রম সার্থক হবে। আমাদের তরফে ভালোবাসা আপনাদের জানাই। অনেক ধন্যবাদ রইল সেই আটজন তরুণ তুর্কিকে যাঁদের সাহসী অক্ষর 'দহরে'-র একাদশতম সংখ্যাকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। আগামীতে তাঁদের কলম আরো বলিষ্ট হয়ে উঠুক, এই আশা রেখে আসুন আমরা পত্রিকার অভ্যন্তরে প্রবেশ করি।
                                          ধন্যবাদান্তে,
২৮ শে জুলাই ২০১৯    সুতনু হালদার ও সৌরভ বর্ধন
   শান্তিপুর, নদীয়া।        সম্পাদকদ্বয়, দহর ব্লগজিন

No comments:

Post a Comment