May 26, 2019

দীপান্বিতা সরকার





কবি দীপান্বিতা সরকারের চারটি কবিতা :

চাকা

মানুষ আর মারা গেছে  কবে?
চামড়াটাই তো শুধু হয়েছে ন্যাতানো ছাই
চোখের আড়ালে সব।

মারা গেছে বললেই কি আর চলে যাওয়া যায়!
মিশে থাকে ঘাম, রক্ত, সৌখিনতা, স্নেহ-আতর
রোজনামচার প্রতিটা জামায়।
আলজিহ্বা চিড়ে ছুটে আসে অস্তিত্বের কাশি,
মারা গ্যাছে বলে কি আর আগের মতন ভালো না বাসি!
আগলিয়ে রাখা আঁতুড়ের ট্যাঙ্ক,
কত কাঁথা নকশি পাড়া দিয়ে পড়িয়ে যায় শৈশব,
গান-আঁকা-নাচ প্রতিভাত সংগ্রাম চক্রে
ফুরায় ধোঁয়াধার উৎসব।

মানুষ জন্মালেই দশের বুকে বাঁচে,
শুধু ফেলে যায় আমার যতটুকু আছে।
দেহ মরে গেলে কেনই বা চোখে জল রবে,
চামড়াটাই তো শুধু হয়েছে ন্যাতানো ছাই-

মানুষ আর মারা গেছে কবে?



ইলিউশন : রাতে ঢাকা

অত্যুষ্ণ দেশকাল মুখ হাঁ করে চায় ঝড়-ঝাপটা,
মার মার কাট কাট নয় বরঞ্চ আদুরে বাতায়ন।

তখন রাতের মহাশূন্যে বাবু হয়ে বসে চাঁদের বাটিতে আলুপোস্ত খেতে খেতে চারপাশ জলের গেলাস হয়ে ওঠে
সাদা বক ঠোঁট বরাবর ম্রিয়মাণ চাঁদে লুটিয়ে পড়ে: বিতর্ক, বাঁচবার ধ্বজা উড়িয়ে ক্লান্ত।

বাদুড় রঙা ধোঁয়া সাঁতরে বেড়ায় যেন ডিনারের শেষে সিগারেটে শান্ত ওষ্ঠধার।
কিসব আঁকিবুঁকি! থম মেরে চুল আঁচড়ায় বিভূতিভূষণ,
জেলিফিশ আর বল্গাহরিণ, সমুদ্র আর সমতল এক হয়ে মিশে যায় গালে:
আসমুদ্রহিমাচল এলোপাথাড়ি বিভীষিকাময় ক্ষুধার্ত।

কচি পীতবর্ণের পাঞ্জাবি পড়া চোখমুখ, শিরদাঁড়াহীন যুবক, কোঁকড়ানো গোফের নীচে একফালি তারা তার তিল।
বুদ্ধিবাদ জৌলুসহীন কেউ ঘোর ভাঙেনি।
আয়না হাতে ইজি চেয়ারে কাজল আঁকে বাষট্টির নাবালিকা, দু'খানা দড়িতে কাপড় নিংড়ে জল ঝাড়ছে মা,
হিমোগ্লোবিনে ওরা একা হয়ে গর্ভবতী মা ভাবছে আর কটা দিন অধীনতামাত্র!

দেহাতি পথেঘাটে আমার চোখ ঢুলে পড়ে মিস্টার.ওয়াটের "ফরগেট নট ইয়েটের" আর্জিতে।

প্রতিটা গেছো মেয়ে সাবধানে যাস বললেই আবার দেহ খুঁড়ে কবিতা লেখার সালোকসংশ্লেষ ঘটায় মিচকে প্রেম।
দিন এভাবেই চলছে,
আর বিপ্লবে ভারসাম্য নেই: সত্যি বলার শক্তি,
সংযম ক্ষীণ

অতএব ধৃতরাষ্ট্র হয়ে ঘুমিয়ে পড়ুক নগরকীর্তন।।



মার্চ জলোচ্ছ্বাস ও এড়ি দমন

মার্চ মাস গোটা এক মারণ ব্যাধি,
ঝাঁঝরা করে দেয় চলে যাওয়ার নোটিশ কেমোথেরাপি;
গরমকাল তখন সদ্য সুতির পাজামা পড়তে শিখেছে।
ভীড় ট্রেন হোক বা ফুটিফাটা মেঘের ইফতারে-
এখনের মতন ওড়নায় নোনতা ঘামের নেমপ্লেট এঁটে দিতে পটু নই,
গেলাস গেলাস সরবত গেয়ে ওঠে ট্যাঙ্কের আলগা ফ্রাই জলে,
শাওয়ার থেকে আমার খোলা কাঁধে পুড়ে যায় অভিশাপ।
আমি ঠ্যাটার মতো ঢোক গিলতে গিলতে ভিজে যাই মার্চে,
না বৃষ্টি হয়নি শেষমেশ, আমি সুদৃঢ় বুকে মাথা রেখে শুনেছি-
আমি তো রইলামই তোমার প্রতিটা প্রাক্-বৈশাখে।
দেশ বিদেশে সেটেলড্, সিম থেকে শোনা যেত "আপনি যাকে ফোন করেছেন তিনি এখন ব্যস্ত আছেন স্বেচ্ছায়"...
তবুও তো শোনা যেত! বাতিলের খাত বুঝি না।
এখনও রাস্তার দুধারে বকুলের মেলা সাজে,
শুধু কিছুটা সময় ভালো খাবারের স্বাদে আঙুল চাটার বিশ্রী দৃশ্য দেখা যায় না,
একগাদা বেল ফুলের বার্তা বাহক হতে আমি আবারও রাজি ,
কেবল তোমার পায়ের চাপে আলগা মন-মাটিজমি দমে যায় না আর...



ভূমিকন্যা

যার জন্যে ফ্রেমে ফ্রেমে কবিতা বেঁধেছি,
যার প্রিয় পোড়া মাটির ভাঁড়ে
আমার ঠোঁট শুষেছে সহস্র যুগের আর্তনাদ,
কিছুটা সময় কেটেছে,
ঝিঁঝিপোকাদের মহড়ায়, চাদরমুড়ির রাতে,
বয়সের ভারে নুঁয়ে পড়া ম্লান আলোয়
শব্দহীন চাঁদের সাথে গল্পেতে।
সেখানেই জুতোর পরিসর আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে,
যে শেকড়বিহীন বটবৃক্ষের কোটর
পেঁচানির চিৎকারে কানপেতে ক্যাকটাসের কাঁধে,
আটকে ধরে বন্দি করেছিল আমায়
ওই মায়ের জঠরে,
সে আজও আমায় গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়,
হাড়ের বিছানায় এঁটেল মাটির কবরে..

______________


1 comment:

  1. ভীষন সুন্দর হয়েছে।অভিনন্দন জানাই।

    ReplyDelete