১. ডাকনাম
শরীর জুড়ে পালক পালক রোদ
পকেটিভর্তি আলোর অমনিবাসে
পলকা বাতাস খেলছে মেমোরি গেম।
কাঠের হারমোনি বাজানো লোকটা
শুয়ে থাকে সাড়ে তিন হাত
দৈর্ঘ্যের বারান্দায়
ওর বুকের ভিতর
কপাট খোলার শব্দ
ওর হাতের তালুতে
শব্দের আসবাব
মোজাইক করা মেঝেতে
বর্ণের আঁকিবুঁকি...
বন্দিশ গাইতে গাইতে লোকটি ঘুমিয়ে পড়ে
ওর চোখের বন্দরে
নৌকা বাওয়ার আজান
শেকল ছেঁড়া নোঙরের শিকড়ে শিকড়ে
অজস্র স্রোতের মেহফিল
লোকটি ঢুকে যেতে থাকে
পরিচয়হীন দিগন্তের সাদা খামে
একদিন সমস্ত
নিরক্ষর কবিতার ডাকটিকিটে
ঘরে ফেরার ঠিকানা না জানা
লোকটির কাছে ফিরে আসে
পরিচিত চিঠিদের ডাকনাম
২. অক্ষর-পালক
প্রতিদিন লিখতে না পারলে মনে হয় শরীরখানায় অসুস্থ হয়ে পড়ে আছি। সেখানে কেউ কোত্থাও নেই, ভাষানদীগুলি অন্ধকার সেবাশ্রমে ডুবে থাকে।শুশ্রূষার অভাব বোধ করি খুব। দীর্ঘদিন আত্মহত্যাকারীর নির্দেশ মানতে মানতে ঔষধি ঘুম এসে ঢলে পড়ে
মৃত্যু সম্ভবা হই ধীরে, জন্মযোনীটি চুষতে চুষতে বুঝতে পারি এবার আয়ুধ আয়ু ফুরিয়ে এসেছে...
অতঃপর ভাঙা পাঁজরে ভরে নিই সঙ্গীত। অক্ষরমোনিয়াম হয়ে চুপ করে বসি, এইভেবে রক্তজবা কিশোরীটি নিরেট স্পর্শে জাগিয়ে দেবে যন্ত্রনাহত ধ্বনিসন্ততি,
ধ্যানমগ্ন সপ্তগ্রামে এসে সকল মায়াবিনী,ডাকিনী-যোগিনী, মহাকাল স্থির হয়ে বাজাবে গৌড় সারং
আর ফুটন্ত হাঁড়ি ভর্তি আকাশে, শরীরি-শবর
সে এসে শুধু শব্দ চরাবে..
৩. হরেক শব্দের কবিতা
অন্তত কেউ একজন
ভাতের মুদ্রাগুলি, রেখে যাক
উপোসীরঙা কোনো গৃহস্থের কূপভাঁড়ে...
একের পর এক
তৃপ্তির ঢেকুর থেকে বেরিয়ে আসবে
"আঃ" শব্দের তাক লাগানো কবিতা।
শব্দ বুনতে বুনতে যে তাঁতি
মাকু দিয়ে সেলাইয়ের কবিতা বানায়
তাকে একটা আস্ত কবি সম্মেলনে ডাকা হোক
কাগজ আর কলম পেষা
মুখোশধারী কবিরা
তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে...
অনেকদিন সুস্বাদু কবিতার
রান্নায় ব্যর্থ শেফেরা এবার
সাদা পোশাক খুলে রাখুক।
রাস্তায় ক্রিং ক্রিং আওয়াজের হকারটি এবার
ডাংগুলি খেলা বিকেলের গায়ে
শব্দ ফেরি করতে করতে
হরেক শব্দের কবিতা লিখবে...
৪. শূন্যতা
যদি দাও স্থিরতার ধ্যানস্থ চুম্বন
অভাবী আখর থেকে ব্রজবুলি সুর
যদি দাও ঘনঘটা শাওনের বেশি
কিই বা দেওয়ার আছে আমাদের কাছে
ফোঁটা ফোঁটা, অকারণ শূন্যতার হাসি
নিষিদ্ধ নিষাদ থেকে ছিন্ন উপসুরে
জেনেছি আঁধার এক নীরব ধর্ষক
যেখানে যেটুকু মুক্তি আকাশে আলোয়
সযত্নে রেখেছ টান সোহাগী সাঁতারে
নন্দিনী তুমিও জানি করবী না পেলে
রক্তের রঞ্জকে বিশু একা ঘুরে মরে
যেদিকে তাকাও তুমি অশরীরী মেঘ
আমার না থাকা টুকু ভাসিয়ে বেড়ায়
৫. সংগোপন
একি তবে ভুল? স্থির হয়ে আসে মায়া
শিথিল আলোর চোখ
পন্নগ ক্রিয়া হানে মোহমৃগডাক,
দ্রুত ছুটে আসে শোক
নেমেছে অতল, প্রতারক জলধির
কাছে ঘুরে মরে দিন
সমাগত ফণা, ঢেউ তুলে দেয় ধীরে
শোধ হবে বলে, ঋণ
তবু তার চোখ, মেঘমন্দ্রিত নয়
শূন্যে বাড়ানো হাত
জানেনা আদতে সেও মুঠোভরা এই
গোপন বৃষ্টিপাত...
No comments:
Post a Comment