March 26, 2019

নিলয় নন্দী'র গুচ্ছকবিতা



                             


১. পাখিজন্ম

যারা পাখিজন্ম চায় আমি তাদের দলে পড়ি না।

আমার ফুসফুসে অত জোর নেই। এত অঙ্গার খেয়েছে বায়ুস্থলী, হাঁপ ধরে যায়। তোমাকে ভুলতে জোরে শ্বাস নিই, মনে করতেও। উড়তে চাইলেই চোখ পড়ে মাটিতে, জলে, কীটপতঙ্গে। মুখ থুবড়ে পড়ি। কচুরিপানায় সূর্য ডোবে। সূর্যোদয় হয়।

যারা আকাশের দিকে মুখ তুলে চলে...
না। আমি না।

আমি চোখ রাখি পায়ের নখে। কান খাড়া রেখে উপদেশ শুনি। আর মনে মনে নগ্ন হই। ততবার গরম শ্বাস ছাড়ি তোমার পালকে। তুমিও অনাবৃত হও। আমি চঞ্চুতে ঢেলে দিই উড়ানমন্ত্র। ডানা মেলে শঙ্খচিল....

শঙ্খ লাগে শরীরে জলে উড়ালপুলেও...

আর দৌড়তে থাকে অস্ট্রিচ সঙ্গমের দিকে।
পাখিজন্ম তার কাছে এক অনিবার্য অভিশাপ।



২. কাটাকুটি

কাটাকুটি শুরু...
আমি উপরের একেবারে বাঁদিকের ঘরে
ফোন বেজে যাচ্ছে।
হোয়াটসঅ্যাপের টিক নীল হচ্ছে না।

আর, নীচের ডানদিকের কোণে এসে বসে পড়ে
একলা স্টেশন, গলিরাস্তা, বাইক আস্ফালন।

"আপনি না থাকলে আমার খারাপ লাগবে"
বোবা স্মার্টফোন। মুখর অনুরোধ উপরোধ।

একঘর সরে আসি ডানে
সে'ও সরে বাঁদিকে তার

দুজনের মাঝে গোল্লাছুট, ক্রসিং ওভার।



৩. পোষ্টমডার্ণ

আমি কবিতার গায়ে স্লীভলেস পরাই আর
কিঞ্চিৎ খোলা রাখি শৈল্পিক তলপেট...

পা গোটানো রংচটা জিনস দেখে জীবনানন্দ ভুলে যান বনলতা সেনের আঁচলের রং কি ছিল!

আমি তখন রে ব্যানের ঠুলিচোখে দেখে যাই জসীমুদ্দিনের ঘরবাড়ি, ইচ্ছেনদী আর রুপালি মারমেড। ডুবসাঁতার আর টলোমলো কাব্যরস।
ধক ধক। জিয়া ধকধক।  শরনিক্ষেপ।

শব্দবাণে মরচে পড়ে গেছে। কবিতা দাঁড়াচ্ছে না।
তাই ছন্দের গায়ে ফুটিয়ে দিই অ্যাড্রিনালিন
ভাবকে ম্যারিনেট করি যৌন ভিনিগারে
মাত্রা বেঁধে রাখি অন্তর্বাসে...

তারপর হেডফোনে কবিতার শীৎকার শুনি।



৪. প্রেমে বা প্যালেটে

এবার একটা প্রেমের কবিতা লিখতেই হবে...

ম্যাজেন্টা রঙ কুয়াশা। গাঢ় সবুজ ইচ্ছেমাঠ।
হলুদ জামদানি ক্যানভাস। মেরুন নেলপালিশ।
আর টইটম্বুর জলরঙ স্রোতস্বিনী...

তোমার চোখে আমার প্রিয় নীল ঢেউ বুদবুদ
স্বপ্ন পার্পল...গোলাপী গ্যাস বেলুন...
উড়ে যাচ্ছে আকাশী ঠিকানা ধূসর চিঠি
আর ব্যক্তিগত রামধনু।

আমার গায়ের রঙ কালো। মন মেঘ।
মেঘের গভীরে লাল ঝড়ের সংকেত
উথালপাতাল নৌকাডুবি...

মাঝি তো পেনসিলের টান। প্রেম প্যালেট।
আর, কবিতা বাধ্যতামূলক...


৫. এবং বিষণ্ণতা

যেখানে সন্ধে নামে সেখানেই বিষণ্ণ রাজহাঁস
বিষণ্ণতা ছুঁয়ে যায় নীলনদ মিশরীয় লিপি
কবেকার শব্দেরা সব স্বজন হারানো ডালপালা
প্রতিবিম্ব চেনা ছক চেনা রাগ অচেনা আপোষ।

যেখানে বৃষ্টি নামে সেখানেই কাগজের নৌকো
ইয়াদে তামান্না খোয়াইশ লমহে তনহাই
লোকাল ট্রেনের পেটে পয়সা কুড়োয় ভ্যানগঘ
পুরনো কুলুঙ্গির চাবি কত আর ধার করে খাবি?

যেখানে বৃষ্টি নামে
সেখানে সন্ধে নামে

অপরিচিতার চোখে
বালি খোঁড়ে বটের শিকড়।


No comments:

Post a Comment