শ্রীকন্ঠর গুচ্ছকবিতা

পাঁচে পঞ্চামৃত    

1.  স্বরবর্ণ

নুন.  দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য বস্তু.
গুণকীর্তনেও জুড়িমেলা ভার.

                   
২.  ব্যঞ্জনবর্ণ

জোড়কলম.  হাইব্রিড তৈরিতে প্রয়োজন.
পরিচর্চার অভাবে নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা.

                 
3.  যুক্তাক্ষর

বউ আর বই.  দুটোরই প্রথমে ব্যঞ্জনবর্ণ শেষে স্বরবর্ণ.
সমীকরণ না জানলে পরমাণু বিস্ফোরণে সংসার ভস্ম.

         

4.  সন্ধি

অভিযোজন.  পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর সহজ উপায়.
ধাঁধার সূত্র না জানলে পাললিক শিলায় জীবাশ্ম যাপন.

   
5.  সমাস

অভিব্যক্তি.  জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে শব্দ সংখ্যাবৃদ্ধি.
কিন্তু ভুল হলে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় ল্যাজ লুপ্ত.

জাতিস্মর

চোখ বুজোলেই সুষুম্নাকাণ্ডে বইতে থাকে লাভার পরিচলন স্রোত

জ্বালিয়ে দ্যায় স্মৃতির অণুবীক্ষণিক কোশ

তলিয়ে যাই হাজার কিলোমিটার নিচে ম্যাগমাচেম্বারে

কখনো বা মৌন হয়ে দাঁড়াই গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখায়
ধ্যানস্থ কোন যোগীর মতো

তরল অন্ধকার আমায় গ্রাস করে

ক্রমশ দু'পা দু'পা করে পিছিয়ে প্রবেশ করি বিদিশার গর্ভে

মুহুর্তে জরায়ু চিরে বেরিয়ে আসি তড়িৎ গতিতে

বায়বীয় পথে জ্বলে যাই,
                                          নিজের অস্তিত্ব হারাই ......

খুঁজে পাই নিজেকে
                                 ছায়াবৃত্তের তরল ক্যানভাসে ....

জেরোফাইট হৃদয়
       

মাটি পোড়া ধুলো ধুলো অন্ধকার ঠেলে
দ্রুত পায়ে নেমে এসেছি পৃথিবীর বায়বীয় নাভিতে

জানলা খোলা মনে সঞ্চিত হেটেরস্ফিয়ারীয় দীর্ঘশ্বাস

অ্যালবেডিয় শব্দ দিয়ে তুমি আমায় সান্ত্বনা দিতে চেয়েছো ঠিকই
কিন্তু আমি জানি শত চেষ্টাতেও পানাজল কখনো রৌদ্র মাখে না

ফুসফুসে যখন মেঘ জমে
তখন হাইড্রোজেন অক্সিজেনের অনুপাত খোঁজা বৃথা

সবের মধ্যে কার্যকারণ তত্ত্ব লুকিয়ে থাকে না

বুক ফাটলেও নাড়াবৃত মাঠ কখনো
আকাশের থেকে দু-ফোঁটা অশ্রু প্রত্যাশা করে না

নেহাইয়ের উপর শুয়ে যে জেরোফাইট হৃদয়
মুহুর্মুহু বজ্রপাতের অঙ্কুশাঘাত পেয়েছে
তার জন্য চেরাপুঞ্জি থেকে বৃষ্টি ধার করার প্রয়োজন পরে না

খান্ডব দহন

ইওসিনীয় ইওহিপ্পাসের যকৃতে গজিয়েছে সামাজিক বনসৃজন

লবণাম্বু উদ্ভিদ শ্বাসমূল দিয়ে চেঁটে খায় তরল অক্সিজেন

সীমান্তে সীমান্তে বহুমুখী নদী পরিকল্পনার জলসেচ করে
দোঁয়াশ মাটিতে সৃষ্টি করবো আরেকটা অ্যামাজনীয় অরণ্য

পাশ দিয়ে বয়ে যাবে নীল নদ

গঙ্গার অভিমুখ ঘুরিয়ে ~ নীলগঙ্গার সঙ্গমস্থলে বসে
তুমি আমি লিখবো "মহাগন্ডোয়ানাল্যান্ড" মহাকাব্য

চারি মেঘের মতো অষ্টগজরাজকে দিয়ে জল ঢেলে
ইওহিপ্পাসের যকৃত আর লবণাম্বুর শ্বাসমূলের জোড়কলমে
কালাহারির সিরোজেমে তৈরি করবো পৃথিবীখ্যাত খান্ডব

মানব জাতির তিন শত্রুকে হত্যা করে
রুখে দেবো খান্ডব দহন
                                       আর
                                                      বিশ্ব উষ্ণায়ন ....

 নিসর্গ

ধূসর কাঞ্চনের চূড়া. পিতামোহ রোদ মাথা রেখেছে
ধবল জঙ্ঘায়.

নির্জন গিরিখাত. তর্পণে মগ্ন সদ্য ন্যাড়া কয়েকটা গাছ.

ঋতুমতী ঝর্নার জ্যোৎস্না বুকে
জলকেলি করে যূথবদ্ধ রঙিন মাছ

সম্মুখে উচ্চটিলা. বিষণ্ণ. নিঃসঙ্গ. বিপত্নীকের মতো
দাঁড়িয়ে. আদ্র চোখ রেখেছে
                                  
                                            দূরে .....

                                                                     বহুদূরে .........
   
                               অপঠিত সমতলের দিকে ........